ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ-জাপা মনোমালিন্য, বিএনপির নতুনরা তৎপর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮
  • ২৮৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা-৪ আসনে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চান না আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। শ্যামপুর ও কদমতলী থানা আর যাত্রাবাড়ী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল মিত্র দল জাতীয় পার্টিকে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, একই আসনে বারবার মিত্রদের ছাড় দেওয়া হলে ওই আসনে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে এই আসনে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিতে দলীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবি জানাবে তারা।

জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এবারও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি চাইবে জাতীয় পার্টি। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মূল দুই নেতা হলেন সাবেক এমপি ও বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সানজিদা খানম এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেন।

অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে বিজয়ী হয়েছিল ধানের শীষ। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নৌকা। নবম সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন মুন্সীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই। সালাহউদ্দিন আহমেদ ও আবদুল হাইয়ের কেউই এবার এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নন। আবদুল হাই ফিরে যেতে চান মুন্সীগঞ্জ সদরে। সালাহউদ্দিন লড়তে চান ঢাকা-৫ আসনে। ফলে বিএনপিকে বেছে নিতে হবে নতুন মুখ। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন। দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম।

রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বাংশের নিম্নাঞ্চলীয় বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল ঢাকা-৪ আসন। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা নিয়ে ঢাকা-৫ আসন গঠিত হলে সীমিত হয়ে পড়ে ঢাকা-৪ আসনের পরিধি। জলাবদ্ধতা এই এলাকার প্রধান সমস্যা। আছে সুপেয় পানির সংকট। অন্যান্য সমস্যা তো রয়েছেই।

এ আসনে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ড. আওলাদ হোসেন। তাঁকে হারিয়ে নির্বাচিত হন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এর আগে এরশাদ আমলেও দুইবার এমপি হয়েছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারও বাবলা জাপার প্রার্থী হবেন। বিএনপি নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গড়বে কিংবা তাদের মধ্যে আসন সমঝোতা হবে। সে ক্ষেত্রে জাপার পক্ষ থেকে বাবলাকে আসনটি ছেড়ে দিতে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বাবলা এমপি হওয়ার পর এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। শ্যামপুর, কদমতলী এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাঁর কার্যকর ভূমিকা নেই। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষ বা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জানান, এবার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুপারিশ জানাবেন তাঁরা।

কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ‘মানুষ নৌকা ছাড়া ভোট দিতে চায় না। এ আসনে আমরা নৌকার প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাব। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জয়ের জন্য নৌকার বিকল্প নেই। আর স্থানীয় এমপি সাহেব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি, তেমনি জনগণের মধ্যেও তেমন কোনো অবস্থান গড়তে পারেননি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কদমতলী থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়নকাজ করেননি। এলাকার রাস্তাঘাটগুলো বেহাল। অথচ আগে যখন আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন তখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাই আগামীতেও আমরা আওয়ামী লীগের এমপি চাই।’

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি গত চার বছরে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন করেছি। ডিএনডি বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়ন করেছি। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমি যাবতীয় কাজে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সানজিদা খানম। দলের সিদ্ধান্ত মেনে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন তিনি। তাঁকে পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য করে দল। সে হিসেবে সানজিদা এলাকার সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এলাকার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রেখেছেন। দল আগামী নির্বাচনে তাঁকে আবার মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী তিনি।

সানজিদা খানম সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য হিসেবে গত ৯ বছরে এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। ইকোপার্ক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের অফিস, ডিএনডি বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প অনুমোদনে উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদ, শ্মশান, কবরস্থানের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ চায় আমি আবারও সরাসরি ভোটে অংশ নিই। যদি দলের মনোনয়ন পাই তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. আওলাদ হোসেন ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আওলাদ দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও নানাভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন।

ড. আওলাদ হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ‘একই আসনে বারবার জোটের শরিকদের ছাড় দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আমরা চাই ঢাকা-৪ আসনে নৌকার একজন প্রার্থী দেওয়া হোক। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।’

এই আসনে বিএনপিতে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা তানভীর আহমেদ রবিন সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর দেশে ফেরেন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আ ন ম সাইফুল ইসলাম ভারতের মাদ্রাজ থেকে এমবিএ করা। তিনি ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল করার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (২য়)। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে দুজনই দলের কর্মসূচিতে নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করছেন। নানা উপলক্ষে এলাকায় সাঁটিয়েছেন রং-বেরঙের পোস্টার-ফেস্টুন। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কদমতলী থানা বিএনপির সভাপতি মীর হোসেন মীরুর নামও দলের স্থানীয় নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে।

তানভীর আহমেদ রবিন সাংবাদিককে বলেন, ‘শ্যামপুরেই আমার জন্ম ও বসবাস। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। আমার বাবা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করেছেন। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমি ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রার্থী।’ তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর সরকারের পর থেকে এই অঞ্চলে বিএনপির হাল ধরেছি। আমার বিরুদ্ধে ৬২টি মামলা হয়েছে। তিনবার জেল খেটেছি। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া জেলে। এর পরও নেতাকর্মীদের ছেড়ে থাকিনি। নেত্রীকে মুক্ত করে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে দল। সে ক্ষেত্রে আমাকে মনোনয়ন দিলে সাংগঠনিকভাবে ও জনসমর্থনের দিক থেকে আমার পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।’

আ ন ম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা আফতাব উদ্দীন আহমেদ দীর্ঘ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। নব্বই থেকে আমার ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু। এখন পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। মামলা আছে ৩০টির বেশি। সব সময় আন্দোলন কর্মসূচিতে থাকার চেষ্টা করেছি। এই মুহূর্তে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর ম্যাডাম জেলে। আর মনোনয়নের বিষয়টি পুরোটাই ম্যাডাম ও তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে। সুযোগ পেলে সফল হতে পারব, এ বিশ্বাস রয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আওয়ামী লীগ-জাপা মনোমালিন্য, বিএনপির নতুনরা তৎপর

আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা-৪ আসনে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চান না আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। শ্যামপুর ও কদমতলী থানা আর যাত্রাবাড়ী থানার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল মিত্র দল জাতীয় পার্টিকে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, একই আসনে বারবার মিত্রদের ছাড় দেওয়া হলে ওই আসনে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে এই আসনে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিতে দলীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবি জানাবে তারা।

জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এবারও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি চাইবে জাতীয় পার্টি। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মূল দুই নেতা হলেন সাবেক এমপি ও বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সানজিদা খানম এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেন।

অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে বিজয়ী হয়েছিল ধানের শীষ। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নৌকা। নবম সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন মুন্সীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই। সালাহউদ্দিন আহমেদ ও আবদুল হাইয়ের কেউই এবার এ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী নন। আবদুল হাই ফিরে যেতে চান মুন্সীগঞ্জ সদরে। সালাহউদ্দিন লড়তে চান ঢাকা-৫ আসনে। ফলে বিএনপিকে বেছে নিতে হবে নতুন মুখ। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন। দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন শ্যামপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ ন ম সাইফুল ইসলাম।

রাজধানীর দক্ষিণ-পূর্বাংশের নিম্নাঞ্চলীয় বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল ঢাকা-৪ আসন। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা নিয়ে ঢাকা-৫ আসন গঠিত হলে সীমিত হয়ে পড়ে ঢাকা-৪ আসনের পরিধি। জলাবদ্ধতা এই এলাকার প্রধান সমস্যা। আছে সুপেয় পানির সংকট। অন্যান্য সমস্যা তো রয়েছেই।

এ আসনে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ড. আওলাদ হোসেন। তাঁকে হারিয়ে নির্বাচিত হন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এর আগে এরশাদ আমলেও দুইবার এমপি হয়েছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারও বাবলা জাপার প্রার্থী হবেন। বিএনপি নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গড়বে কিংবা তাদের মধ্যে আসন সমঝোতা হবে। সে ক্ষেত্রে জাপার পক্ষ থেকে বাবলাকে আসনটি ছেড়ে দিতে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বাবলা এমপি হওয়ার পর এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। শ্যামপুর, কদমতলী এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে তাঁর কার্যকর ভূমিকা নেই। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষ বা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা জানান, এবার দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুপারিশ জানাবেন তাঁরা।

কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ‘মানুষ নৌকা ছাড়া ভোট দিতে চায় না। এ আসনে আমরা নৌকার প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাব। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জয়ের জন্য নৌকার বিকল্প নেই। আর স্থানীয় এমপি সাহেব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি, তেমনি জনগণের মধ্যেও তেমন কোনো অবস্থান গড়তে পারেননি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কদমতলী থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়নকাজ করেননি। এলাকার রাস্তাঘাটগুলো বেহাল। অথচ আগে যখন আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন তখন অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তাই আগামীতেও আমরা আওয়ামী লীগের এমপি চাই।’

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি গত চার বছরে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন করেছি। ডিএনডি বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়ন করেছি। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। আমি যাবতীয় কাজে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সানজিদা খানম। দলের সিদ্ধান্ত মেনে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন তিনি। তাঁকে পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য করে দল। সে হিসেবে সানজিদা এলাকার সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এলাকার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রেখেছেন। দল আগামী নির্বাচনে তাঁকে আবার মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী তিনি।

সানজিদা খানম সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য হিসেবে গত ৯ বছরে এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। ইকোপার্ক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের অফিস, ডিএনডি বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প অনুমোদনে উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদ, শ্মশান, কবরস্থানের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ চায় আমি আবারও সরাসরি ভোটে অংশ নিই। যদি দলের মনোনয়ন পাই তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ড. আওলাদ হোসেন ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আওলাদ দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও নানাভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন।

ড. আওলাদ হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ‘একই আসনে বারবার জোটের শরিকদের ছাড় দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আমরা চাই ঢাকা-৪ আসনে নৌকার একজন প্রার্থী দেওয়া হোক। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।’

এই আসনে বিএনপিতে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা তানভীর আহমেদ রবিন সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর দেশে ফেরেন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আ ন ম সাইফুল ইসলাম ভারতের মাদ্রাজ থেকে এমবিএ করা। তিনি ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল করার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (২য়)। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে দুজনই দলের কর্মসূচিতে নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করছেন। নানা উপলক্ষে এলাকায় সাঁটিয়েছেন রং-বেরঙের পোস্টার-ফেস্টুন। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কদমতলী থানা বিএনপির সভাপতি মীর হোসেন মীরুর নামও দলের স্থানীয় নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে।

তানভীর আহমেদ রবিন সাংবাদিককে বলেন, ‘শ্যামপুরেই আমার জন্ম ও বসবাস। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। আমার বাবা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করেছেন। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমি ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রার্থী।’ তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর সরকারের পর থেকে এই অঞ্চলে বিএনপির হাল ধরেছি। আমার বিরুদ্ধে ৬২টি মামলা হয়েছে। তিনবার জেল খেটেছি। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া জেলে। এর পরও নেতাকর্মীদের ছেড়ে থাকিনি। নেত্রীকে মুক্ত করে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে দল। সে ক্ষেত্রে আমাকে মনোনয়ন দিলে সাংগঠনিকভাবে ও জনসমর্থনের দিক থেকে আমার পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।’

আ ন ম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা আফতাব উদ্দীন আহমেদ দীর্ঘ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। নব্বই থেকে আমার ছাত্র রাজনীতির জীবন শুরু। এখন পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। মামলা আছে ৩০টির বেশি। সব সময় আন্দোলন কর্মসূচিতে থাকার চেষ্টা করেছি। এই মুহূর্তে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর ম্যাডাম জেলে। আর মনোনয়নের বিষয়টি পুরোটাই ম্যাডাম ও তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করছে। সুযোগ পেলে সফল হতে পারব, এ বিশ্বাস রয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ